নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকৃতির বুক ফেটে পড়ছে হিমাচল প্রদেশে। মাত্র এক মাসের বর্ষায় বিপর্যয়ের খেলা, যেখানে মেঘের অমিত শক্তি থামছে না। ১৯ বার মেঘফাটার ঝড়, ২৩ বার আকস্মিক বন্যার আক্রমণে বিধ্বস্ত হচ্ছে পাহাড়, আর মানুষ হারাচ্ছে জীবন—৭৮ জন গিয়েছে অনন্তের পথে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, এই ধ্বংসের দায় কে নেবে?
২০২৫ সালের মাত্র শুরুতেই হিমাচলের প্রকৃতির গর্জন শুনতে পাওয়া গেছে চারিদিকে। গত বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে, ৪০৮ প্রাণ চলে গেছে, হাজার বাড়ি ভেঙে গেছে, আর সাত হাজার গবাদিপশু হারিয়েছে প্রাণ। ধ্বংসের হিসাব যেন কোনো শেষ নেই।
বন্যার গর্জনে স্মৃতিচিহ্ন
২০১৬ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সিমলার শহর যেন বন্যার মুকুটধারী। ৯১ জন প্রাণ গেছে এই পাহাড়ি রাজ্যের রাজধানীতে, ২০২৪-এ মাত্র একবছরে মারা গেছে ৪০ জন। কুলু থেকে মানালি, সিমলা থেকে কালকা রাস্তায় প্রতিটি ধস যেন একটি কষ্টের গল্প বলে।
আইআইটি রোপারের গবেষণা জানাচ্ছে, হিমাচলের ৪৫ শতাংশ পাহাড় ধসপ্রবণ—একটি প্রকৃতির রক্তাক্ত ব্যাথা। যেখানে ঢাল পাঁচ থেকে ষোল দশমিক চার ডিগ্রি, সেখানে পাহাড়ের বুক ফাটছে, আর মানুষের বাড়ি ডুবে যাচ্ছে বন্যায়।
অবৈজ্ঞানিক নির্মাণ ও গাছের বিদায়
“পাহাড়ে বাড়ি তো নয়, এক প্রকার গগনচুম্বী দালান।” তথাগত সেনের বর্ণনায় যেন পাহাড়ের বেদনাময় আর্তনাদ। যেখানে বৃষ্টি ঝরতে যেত, সেখানে এখন বস্তি বসেছে। গাছের রক্তস্রোত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, নতুন সড়ক, সুড়ঙ্গ তৈরি হলেও প্রকৃতির ক্ষতি ফিরে আসবে না।
পরিবেশবিদ মল্লিকা জানাল বলেন, “আমরা আমাদের হাতে পৃথিবীর ভাগ্য তুলে দিয়েছি, কিন্তু কেউ দায় নিচ্ছে না। রাজনীতিক, সাধারণ মানুষ—সবাই নিজেদের দায় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই রূপ আমরা তৈরি করেছি আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে।”
দায়-দায়িত্বের শূন্যতা ও সচেতনতার অভাব
সাংবাদিক শরদ গুপ্তা তীব্রভাবে বলেন, “সব দায় সরকার আর রাজনীতিকদের ওপর চাপানো ঠিক না। সচেতনতা বাড়াতে হবে। নির্বাচনে পরিবেশ কখনও আলোচনার বিষয় হয় না—যদিও প্রকৃতি বারবার আমাদের নাকে আঘাত দিচ্ছে।”
দিল্লির উদাহরণ সামনে। বছরে একবার হলেও শহর ‘গ্যাস চেম্বার’ হয়ে ওঠে, তবুও বাজি পোড়ানো বন্ধ হয় না। এখানেই বোঝা যায়, দায়বোধের অভাব কতটা মারাত্মক।
পর্যটন বনাম পরিবেশ—এক অবিচ্ছেদ্য দ্বন্দ্ব
পর্যটন আসলে অর্থনীতির শিরা। কিন্তু মল্লিকা জানাল, “পর্যটকের পদধ্বনি আজ পাহাড়ের হৃদয়কে ক্লেশ দিচ্ছে। বদ্রীনাথ, কেদারনাথের স্বপ্ন আজ বিষাদের রূপ নিয়েছে।”
হিমাচলের পাহাড় আর নয় শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক, সে আজ দাঁড়িয়ে আছে ঝুঁকির মুখে। আমাদের অভ্যাস, আমাদের অদক্ষতা, আমাদের অবহেলা—এসব মিলে তৈরি করেছে এক ভয়াবহ প্রকৃতির রূপ। দায়িত্ব নিতে হবে একসঙ্গে, ভাবতে হবে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান। না হলে, আগামী দিনের হিমাচল হয়ে উঠবে এক ভয়ঙ্কর প্রেতাত্মা, যার আর কোনো মুখ থাকবে না।
চামেলী খাতুন/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
হিমাচলে মেঘফাটা বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যয়, বাড়ছে মৃত্যু
- আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ১২:০১:৩৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ১২:০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ